উইভিং-১

কটন ফাইবার

এসএসসি(ভোকেশনাল) - উইভিং-১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

আরবি ভাষায় কুতুম শব্দ থেকে কটন শব্দের আবির্ভাব। ইংরেজিতে যাকে বলে কটন, বাংলায় আমরা তাকে তুলা বলি। আরবগণই সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকভাবে তুলা চাষ শুরু করেন এবং বাণিজ্যিক দ্রব্য হিসেবে বাজারে তুলা ব্যবসার প্রচলন করেন। কয়েক শতাব্দী থেকে আরবগণই ছিল আন্তর্জাতিক তুলা ব্যবসায়ী জাতি। স্পিনিং অর্থাৎ সুতা প্রস্তুতকরণ মিলসমূহে কাঁচামাল হিসেবে তুলা ব্যবহৃত হচ্ছে।

বর্তমানে প্রাকৃতিক আঁশসমূহের মধ্যে তুলার স্থান প্রথম। অর্থাৎ এক নম্বর আঁশ হিসেবে তুলাকে ধরা হয় । তুলার দ্বারা তৈরি বস্ত্র ও পোশাক সামগ্রীর চাহিদা বর্তমান বিশ্বে প্রায় ৬৫ শতাংশ কারণ তুলা দ্বারা তৈরি বস্তু ও পোশাক খুবই আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যসম্মত। ইহা ত্বকে কোনো ক্ষতি করে না।

বাংলাদেশে প্রাচীনকাল থেকেই তুলার চাষ হয়ে আসছে। তবে আঁশের মানের কারণে বাণিজ্যিকভাবে সুতা প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি। আমাদের দেশের তৈরি তুলা আঁশের দৈর্ঘ্য ও শক্তি কম থাকার কারণে উৎপাদিত তুলা যারা ভালো মানের সুতা প্রস্তুত করা সম্ভব হয় না। তবে বর্তমানে তুলা উন্নয়ন বোর্ড আমেরিকা থেকে তুলা বীজ এনে তা দ্বারা শংকর বীজ তৈরি করে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে তুলা চাষ শুরু করেছে। যা স্পিনিং মিলসমূহে নিম্নমানের সুতা তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে।

তুলার বোটানিক্যাল নাম Botanical Name of Cotton)
উদ্ভিদ শ্রেণি হিসেবে তুলা গোসিপিয়াম (Gossypium) শ্রেণিভুক্ত। গোসিপিয়াম শ্রেণির মধ্যে নিম্নোক্ত প্রজাতির তুলা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। 
(১) গোসিপিয়াম হারব্যাকাম (Gossypium Herbaceum) (২) গোসিপিয়াম আরবোরিয়াম (Gossypium Arboreum) (৩) গোসিপিয়াম হিরসুটাম (Gossypium Hirsutum) (৪) গোসিপিয়াম বারবাডেন্স (Gossypium Barbedense )

গোসিপিয়াম হারব্যাকাম (Gossypium Herbaceum)
 এ প্রজাতির গাছ ভারত, পাকিস্তান, চীন ও বাংলাদেশে জন্মে। আঁশের দৈর্ঘ্য ২০ থেকে ২৬ মিলি মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে ।

গোসিপিয়াম আরবোরিয়াম (Gossypium Arboreum)
 ভারত, পাকিস্তান, চীন ও রাশিয়ায় এ প্রজাতির গাছ চাষ হয়। তবে আমেরিকায় ইহার চাষ সর্বাধিক। আঁশের দৈর্ঘ্য ১৫ থেকে ৩০ মিলি মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

লোলিপিয়াম ফিটাম (Gossyplum Hirsutum) 
এ প্রজাতির গাছ চাষের জন্য দক্ষিণ আমেরিকা অন্যতম। তবে ভারত, পাকিস্তান ও রাশিয়ায় এ প্রজাতির তুলার চাষ হয়ে থাকে। তবে আমেরিকার ইহার চাষ সর্বাধিক। এর আঁশের দৈর্ঘ্য ১৫ থেকে ৩০ মিলি মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। 

গোসিলিয়াম ৰাৱবাভেল (Gossypium Barbedense) 
মিসরীর সি আইল্যান্ড (Sea Island) t এ প্রজাতির অন্তর্গত। আগের দৈর্ঘ্য ৩০ থেকে ৬০ মিলি মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে ।

কটন ফাইবারের শ্রেণিবিভাগ (Classification of cotton fiber) 
উৎপত্তি ও স্টাপল লেহ-এর উপর নির্ভর করে বাণিজ্যিক ভাবে কটন ফাইবারের শ্রেণিবিভাগ করা হয়। সাধারণত ৬ প্রকারের কটন পাওয়া যায়। 
১. সি - আইল্যান্ড কটন (Sea Isaland cotton) 
২. ইজিপশিয়ান কটন (Egyptian cotton) 
৩. ব্রাজিলিয়ান ফটন (Brazilian cotton) 
৪. আমেরিকান কটন (American cotton) 
৫. ইন্ডিয়ান কটন (Indian cotton) 
৬. চায়না কটন (China cotton)

সি আইল্যান্ড কটন (Sea Isaland cotton) 
মূলত সি আইল্যান্ড কটন বাৱৰাডোল থেকে এসেছে। কাজেই এ ধরনের কটনের নাম হয়েছে গোলিপিয়াম ৰাৱবাডেল। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কটন। আমেরিকা, কানাডা, ক্যারোলিনা, জর্জিয়া ও ফ্লোরিডায় এ ধরনের কটন জন্মে। এটি খুবই লম্বা, সূক্ষ্ম, নরম, সিল্কি সর্বোপরি ভালো শক্তিসম্পন্ন ফাইবার। এটি খুবই সুষম ও লো এবং টুইস্ট ভেরিয়েশন খুবই কম। রং হালকা ক্রিম সাদা। স্টাপল লেংথ ৩.০ সে মি (সেন্টি মিটার) বা তর্দূধ্ব।

ইজিপশিয়ান কটন (Egyptian cotton) 
মিসর ও মিডল ইস্ট-এর দেশসমূহে এ ধরনের কটন পাওয়া যায়। এ ফাইবারও সি- আইল্যান্ড কটনের মতো লম্বা, সুক্ষ্ম, নরম সিল্কি। কিন্তু সামান্য নিম্নমানের। এ ফাইবারের স্টাপল লেন্থ ৩৭ হতে ৪.৫ সেমি (সেন্টি মিটার)। 

ব্রাজিলিয়ান কটন (Brazilian cotton) 
এ কটনকে পেরুলিয়ান কটনও বলা হয়। এ ধরনের কটন মূলত পেরুতে জনে। পরে ব্রাজিলেও প্রচুর পরিমাণে এ ধরনের কটন জন্মানোর কারণে এ ভ্যারাইটি কটন ব্রাজিলিয়ান কটন হিসেবে পরিচিত। রং সাধারণত হালকা সাদা থেকে ক্রিম। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হালকা সোনালি। ফাইবার কিছুটা কর্কশ কিন্তু স্থিতিস্থাপক গুণসম্পন্ন। স্টাপল লেন্থ ৩ থেকে ৪ সে মি (সেন্টি মিটার)।

আমেরিকান কটন (American cotton)
আমেরিকা অথবা উত্তর আমেরিকায় এ ধরনের কটন জন্মে। এ কোয়ালিটির কটনের স্টাপল লেন্থ ২.৫ হতে ৩.৫ সেমি (সেন্টি মিটার)।

ইন্ডিয়ান কটন (Indian cotton)
এ কটন ভারতবর্ষে পাওয়া যায়। সাধারণত নিম্নমানের। স্টাপল লেন্থ কম ও ব্যাস বেশি অর্থাৎ মৌা। রং সাধারণত সাদা। স্টাপল লেন্থ ২ থেকে ৩ সে মি (সেন্টি মিটার)।

চায়না কটন (China cotton)
শুধু চীনে এ কটন পাওয়া যায়। খুবই নিম্নমানের। ভালো মানের সুতা ও কাপড় তৈরি করতে ব্যবহৃত হয় না । স্টাপল লেন্থ ১.৫ থেকে ২ সে মি (সেন্টি মিটার)।

কটন উৎপাদনকারী দেশসমূহের নাম

পৃথিবীর বহু দেশে কটন জন্মে। তবে কটন ফাইবারের দৈর্ঘ্য বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন হয়ে থাকে। নিচে কটন উৎপাদনকারী দেশসমূহের নাম দেওয়া হলো।

  • মিসর, আমেরিকা, ক্যারোলিনা, জর্জিয়া, ফ্লোরিডা।  
  • ভারত, পাকিস্তান, রাশিয়া। 
  • চায়না, ব্রাজিল, মেক্সিকো, সুদান। 
  • তুরস্ক, আর্জেন্টিনা, স্পেন, সিরিয়া, পেরু, গ্রিস, কলম্বিয়া। 
  • বাংলাদেশ।

তুলার গ্রেডিং (Grading of Cotton) 
তুলা আঁশের গ্রেডিং মূলত তুলার ট্রাসের পরিমাণের উপর নির্ভর করে। ট্রাস বলতে সাধারণত তুলার মধ্যে তুলা ছাড়া অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমন- ভাঙা পাতা, মরা পাতা, কুঁড়ি, ধুলাবালি, ময়লা, বীজের ভাঙা টুকরা ইত্যাদিকে বোঝায়। তুলা থেকে উন্নতমানের সুতা প্রস্তুত করতে হলে ট্রাস ও ক্ষুদ্র আঁশের পরিমাণ কমাতে হবে। তেমনি তুলাকে গ্রেডিং করতে হবে, ট্রাসের পরিমাণ জানতে হবে। তুলার কতটুকু ট্রাস উপস্থিত তা জানার জন্য মেশিনের সাহায্য নিতে হবে। সাধারণত যে যন্ত্রের সাহায্যে ট্রাসের পরিমাপ করা হয় তার নাম শার্লি এনালাইজার। কয়েকটি দেশের তুলার গ্রেডিং নিম্নে দেওয়া হলো।

(১)  ইজিপশিয়ান তুলা- 
এক্সট্রা ফাইন (Extra Fine ) 
ফাইন (Fine) গুড (Good) 
ফুললি গুড ফেয়ার (Fully Good Fair) 
গুড ফেয়ার (Good Fair) 
ফেয়ার (Fair)

(২) ভারতীয় তুলা- 
সুপার চয়েস (Supper Choice ) 
চয়েস (Choice ) 
সুপার ফাইন (Supper Fine ) 
ফুললি গুড (Fully Good) 
ফাইন (Fine ) 
গুড (Good) 
ফুললি গুড ফেয়ার (Fully Good Fair)

উপরোক্ত গ্রেডিং বা শ্রেণি বিভাগ সাধারণত: তুলার অপদ্রব্য এবং রং-এর উপর নির্ভর করে করা হয়। এই গ্রেড তুলা আঁশের দৈর্ঘ্যর উপর ভিত্তি করে করা হয় না। উদাহরণস্বরূপ মিডলিং গ্রেডের আঁশের দৈর্ঘ্য ২৫ মি মি (১') ৩২ মি মি (১) এবং ৩৫ মি মি (১) হতে পারে। অবশ্য এটাও ঠিক যে, লম্বা আঁশের তুলার সাথে অপদ্রব্যের পরিমাণ কম থাকে। উপরে উল্লেখিত গ্রেডিং-এ পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি তুলার গ্রেডিং করা হয়নি। তবে, পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি তুলার নিজস্ব কোনো গ্রেডিং করা হয় না। আমেরিকান তুলার গ্রেডিংকেই পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি গ্রেডিং হিসেবে ধরা হয়।

                                                                                                                                        তুলার চাষ (Cultivation of Cotton)

তুলা চাষ পদ্ধতি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকমের ও বিভিন্ন সময়ে হয়ে থাকে। এক এক দেশ ও অঞ্চ ভেদে চাষ পদ্ধতি আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। তবে সাধারণ শর্তসমূহ হলো তুলা বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল উঠতে ৫ থেকে ৭ মাস সময় লাগে। বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া বিভিন্ন ও জমির উর্বরতাও বিভিন্ন হয়ে থাকে। কাজেই, চাষ পদ্ধতি ও সময়ও বিভিন্ন হয়ে থাকে। 

প্রায় সব রকমের মাটিতে তুলা জন্মে। তবে বেশি হালকা বেলে মাটি তুলা চাষের উপযোগী নয়। তুলা চাষের জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মাটি হলো বেলে দো-আঁশ মাটি ও দো-আঁশ মাটি। এছাড়া এঁটেল দো-আঁশ ও পলিযুক্ত এঁটেল বা দো-আঁশ মাটিতেও তুলা চাষ করা যায়। যেসব উঁচু জমিতে বন্যার পানি উঠে না বা বৃষ্টির পানি জমে থাকে না এরূপ জমি তুলা চাষের জন্য উপযুক্ত। যে জমি ছায়াযুক্ত স্যাঁতসেঁতে অথবা বৃষ্টির পানি ২-৬ ঘণ্টার মধ্যে নেমে যায় না এরূপ জমি কখনও তুলা চাষের জন্য নির্বাচন করা উচিত নয়। তুলা চাষের আদর্শ pH এর মাত্রা হলো- ৬.০-৭.৫। PH-৬ এর নিচে নেমে এলে অম্লত্ব কমানোর জন্য চুন ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়।

তুলার জমি তৈরির সময় হচ্ছে বর্ষাকাল। তখন প্রায়ই বৃষ্টি লেগে থাকে। বৃষ্টির ফাঁক বুঝে জো (চাষের জন্য উপযোগী সময়) অবস্থায় ৩-৪টি চাষ ও ম‍ই দিয়ে মাটি ঝুরে ও সমতল করে তৈরি করতে হবে। সে সাথে আগাছা ও আবর্জনা থাকলে তা বেছে পরিষ্কার করে নিতে হবে। উল্লেখ্য তুলার বীজ বপনের সময় খুবই সীমিত। তাই যদি হাতে সময় না থাকে তাহলে চাষ না দিয়ে নিড়ানির সাহায্যে মাটি আলগা করে এবং আগাছা থাকলে তা পরিষ্কার করে বীজ বপন করা যায় । তুলার জমিতে জৈব সার ব্যবহার করা উত্তম। সম্ভব হলে একরপ্রতি প্রায় ৫৫.৬৫ মণ পচা গোবর বা আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়ে যেমন ফলন বাড়ে, তেমনি আনুপাতিক হারে রাসায়নিক সারও কম ব্যবহার করা চলে। এছাড়া জৈব সার ব্যবহার করলে দস্তা, বোরন, অ্যাসনেসিয়াম এসব আনুপাদ্য উপাদানের ঘাটতি কমিয়ে দেয়। অম্লযুক্ত লাল মাটিতে তুলার ভালো ফলন পাওয়ার জন্য একরপ্রতি প্রায় ২২ মণ চুন ব্যবহার করা হয়। জৈব সার জমি তৈরির প্রথম দিকে প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। 

এ পর্যন্ত তুলা চাষের যত উন্নত প্রযুক্তি বের হয়েছে তন্মধ্যে সময়মতো বীজ বপন অন্যতম। সময়মতো বীজ বুনলে আশানুরূপ ফসল পাওয়া যায়। 

আগাম শীত এলাকায় বিশেষ করে রংপুর, দিনাজপুর এলাকায় শ্রাবণ মাস হতে ভাদ্রের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে অবশ্যই বীজ বোনার কাজ শেষ করতে হবে। অন্যান্য এলাকায় শ্রাবণের মাঝামাঝি হতে ভাদ্রের মাঝামাঝি পর্যস্তবীজ বোনার উপযুক্ত সময়। তবে মধ্য শ্রাবণের দিকে বীজ বোনা ভালো । 

বপনের সুবিধার জন্য বীজ ৩/৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে তা ঝুরঝুরে মাটি বা শুকনো গোবর অথবা ছাই দিয়ে এমনভাবে ঘষে নিতে হবে যাতে আঁশগুলো বীজের গায়ে লেগে না যায় এবং বীজ একটা থেকে অন্যটা আলাদা হয়ে যায়। এছাড়া সালফিউরিক অ্যাসিড দিয়ে বীজ আঁশমুক্ত করেও বোনা যায়। এতে বীজের গায়ে লেগে থাকা রোগজীবানু পোকার ডিমও বিনষ্ট হয়ে থাকে। 

স্বাভাবিক অবস্থায় ভূলা বীজ সারিতে বপন করতে হয়। হাত লাঙল দিয়ে হালকাভাবে সারি টেনে অনুমোদিত সার প্রতি সারিতে ভাগ করে নিয়ে তা প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর নির্ধারিত দূরত্বে (১.২৪ সে মি অথবা ই থেকে ১") গভীরে ৩/৪টি বীজ মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে । প্রতিকূল আবহাওয়া জমি চাষ করা সম্ভব না হলে পলিব্যাগে চারা উৎপন্ন করে ২০-৩০ দিন বয়সের চারা রোপণ করা যায়।

সাধারণত: সারি থেকে সারির দূরত্ব ১০০ সে মি (৩.৩ ফুট) ও গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৫০-৬০ সে মি (প্রায় ২ ফুট) রাখতে হবে। চারা গজানোর দশ দিনের মধ্যে প্রথমবার চারা পাতলা করা প্রয়োজন। ঐ সময় দুটি ভালো চারা রেখে অবশিষ্ট চারাগুলো তুলে ফেলতে হবে। চারার বয়স ২০-২৫ দিন হলে শেষবার চারা পাতলা করতে হবে। এ সময় একটি ভালো ও সবল চারা রেখে অবশিষ্ট চারা তুলে ফেলতে হবে। চারা পাতলা করার সময় প্রয়োজন হলে আগাছা সাফ করতে হবে।

জমি ভালোভাবে তৈরি করে নিলে শেষ চারা পাতলা করার সময় প্রথমবার নিড়ানি দিলেই চলবে। অবস্থা ভেদে ও আগাছার পরিমাণ লক্ষ্য করে ২/৩ বার তুলা ক্ষেতে নিড়ানি দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

তুলা ফসলে বিভিন্ন প্রকার পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়ে থাকে। এসবের মধ্যে জ্যাসিড, বোল-ওয়ার্ম ও জাব পোকা উল্লেখ্যযোগ্য ।

ক্ষেত্রের বোল ভালোভাবে কেটে বের হলে পরিষ্কার শুকনো দিনে বীজ তুলা ওঠাতে হয়। সাধারণত ৩ বারে ভুলা ওঠাতে হয় । প্রথমবার এমন সময় ওঠাতে হবে যেন মোট ফসলের অর্ধেক (শতকরা ৫০ ভাগ) তুলা ওঠানো যায়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বারে ৩০ ভাগ ও ২০ ভাগ তুলা ওঠাতে হবে। তবে তুলা ওঠানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে ময়লা, মরা পাতা ও পোকায় আক্রান্ত খারাপ অপুষ্ট তুলা যেন না আসে। ভালো তুলা আলাদাভাবে উঠিয়ে তা আলাদাভাবে ৩/৪ বার ভালো করে রোদে শুকিয়ে গুদামজাত করতে হবে। খারাপ ও নষ্ট বীজ তুলা আলাদা ওঠানো দরকার। কোনো সময়ই ভালো ও খারাপ তুলা একত্রে মেশানো ঠিক নয়।

স্বাভাবিক অবস্থায় হেক্টরপ্রতি ১২০০-১৫০০ কেজি বীজ তুলা পাওয়া যায়।

তুলার দোষত্রুটি (Faults of Cotton)

সাধারণত কাঁচা তুলায় নিম্নলিখিত দোষত্রুটি দেখতে পাওয়া যায়- 
১) ড্যাম্প কটন (Damp Cotton ) 
২) অপরিপক্ক আঁশ (Immatured Fibre) 
৩) ডেড ফাইবার বা মৃত আঁশ (Dead Fibre) 
৪) কেক ফরমেশন (Cake Formation ) 
৫) পেস্ট ফরমেশন (Paste Formation) 
৬) ফলস মিলডিউ বা গ্রে মিলডিউ (Flase mildew / Grey mildew ) 
৭) কটন রাস্ট বা তুলায় মরিচার দাগ ( Cotton rust) 
৮) পাউডারি বা গুঁড়া মিলডিউ (Powdery mildew ) 
৯) লিন্ট রট (Lint rot) 
১০) সেলুলোজ ডিগ্রেডেশন (Cellulose degredation)

ড্যাম্প কটন (Damp Cotton)-
ভিজা ও ঠান্ডা আবহাওয়ায় গাছ থেকে বীজ তুলা তুলে আনলে অথবা মাটির কারণে কিছু কিছু বীজতুলা খুব আস্তে আস্তে পরিপক্ক হয়, যা ভালো আঁশের সাথে মিশে যায়। বীজ তুলা তোলার সময় সাবধানতার সাথে সংগ্রহ করে পরবর্তীতে বেছে অপরিপক্ক পট বা বল আলাদা করে এবং রোদে শুকিয়ে এ ধরনের ত্রুটি দূর করা সম্ভব।

অপরিপক্ক আঁশ (Immatured Fibre) -
অনুর্বর মাটি বা একই মাঠে দু-একটি গাছ পোকায় আক্রমণ বা ব্যাকটেরিয়াল আক্রমণে ভালোভাবে বৃদ্ধি ঘটে না। গাছের সাথে সাথে আঁশ ও আশপাশের গাছের তুলনায় অপরিপক্ক থাকে। এছাড়াও একই পট বলেও কিছু কিছু অপরিপক্ক ফাইবার পাওয়া যায়। 

তুলা গাছের রোগাক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে উক্ত গাছ তুলে ফেলা বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। অথবা বীজ তুলা সংগ্রহ করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করলে এ ধরনের ত্রুটি কিছুটা দূর করা সম্ভব।

ডেড ফাইবার বা মৃত আঁশ (Dead Fibre)-
কিছু কিছু গাছ যেমন অপরিপক্ক থাকে, তেমনি আবার কিছু কিছু গাছ বেশি পরিপক্ক হয়ে যায়। উক্ত গাছ বা বেশি পরিপক্ব পট থেকে যে আঁশ সংগ্রহ করা হয় তা বেশির ভাগ মৃত বা ডেড ফাইবার। ভালো আঁশের মধ্যেও কিছু পরিমাণ মৃত আঁশ পাওয়া যায়। মৃত আঁশের পরিমাণ বেশি থাকলে তাকে হোয়াইট ফ্লাইও (White fly) বলা হয় ।

কেক ফরমেশন (Cake Formation ) - 
আঁশ বল থেকে আলাদা করার পর কিছু কিছু আঁশ শক্ত হয়ে গুচ্ছ তৈরি করে। ইহা সাধারণত গাছে থাকাকালীন পোকামাকড়ের দংশনের কারণে হয়ে থাকে। গাছ থেকে বল সংগ্রহ করাকালীন ত্রুটিমুক্ত বল সংগ্রহ করলে এ ধরনের ত্রুটি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

পেস্ট ফরমেশন (Paste Formation ) - 
ভুলা আঁশের মধ্যে কিছুটা সাদা অংশ পেস্ট-এর মতো পাওয়া যায়। গাছে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণের কারণে এ ধরনের ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। গাছ থেকে বীজ তুলা সংগ্রহ করার পর বাছাই করে আলাদা করতে হবে।

ফলস মিলডিউ বা গ্রে মিলডিউ (Flase mildew / Grey mildew) - 
ইহা সাধারণত ফাংগাস আক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। খারাপ আবহাওয়ার কারণেও এ ধরনের ত্রুটি অর্থাৎ সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কালো অথবা বাদামি দাগ দেখা যায়।

কটন রাস্ট বা তুলায় মরিচার দাগ ( Cotton rust)- 
অত্যধিক শুকনো আবহাওয়া অথবা বৃষ্টির পরে চাষ করা হলে এ ত্রুটি দেখা যায়। তুলায় কখনও পাতার বা ঘাসের দাগ দেখতে পাওয়া যায়। ইহাই মরিচা বা রাস্ট।

পাউডারি বা গুঁড়া মিলডিউ ( Powdery mildew)- 
নির্দিষ্ট সময়ের পরে অথবা অত্যধিক শুকনো আবহাওয়ায় তুলা চাষ করলে এ ধরনের ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। আঁশের পৃষ্ঠে কালো বা বাদামি রং-এর গুঁড়োই এ ধরনের ত্রুটি।

লিন্ট রট (Lint rot) 
আঁশ হলুদ বা বাদামি হলুদ ধারণ করাকে লিন্ট রট বলে । খারাপ আবহাওয়া অথবা বীজ তুলা গাছ হতে তোলার পর ভিজা আবহাওয়ায় রেখে দিলে এ ধরনের ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়।

স্টিকি কটন (Sticky Cotton)- 
এ ধরনের তুলা প্রথমে সাদা ও পরে আস্তে আস্তে কালো রং ধারণ করে। ভাঙা বীজ থেকে তৈলাক্ত ও গ্রিজি পদার্থ এসে আঁশকে স্টিকি করে দেয়, এছাড়া ফাংগাস আক্রমণে এ ধরনের ত্রুটি হতে পারে। 

সেলুলোজ ডিগ্রেডেশন (Cellulose degredation)- 
পোকামাকড়ের দংশনে অথবা পোকামাকড় নিধনের জন্য ব্যবহৃত ওষুধের মাত্রা বেশি হলে এবং তুলায় লেগে গেলে আঁশের সেলুলোজ নষ্ট হয়ে যায়।

                                                                                                                            তুলার ব্যবহার (Uses of Cotton)

* কটনের ব্যবহার বহুবিধ এবং চাহিদাও প্রচুর। নমনীয়, আর্দ্রতা ধারণক্ষমতা, বেশি আরামদায়ক বলে প্রায় সব ধরনের কাপড় তৈরিতে কটন আঁশ ব্যবহৃত হয়। 
* পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্যই গ্রীষ্মকালীন পোশাক তৈরিতে কটন আঁশ ব্যবহৃত হয় 
* বাড়িতে ব্যবহৃত বিভিন্ন কাপড় যেমন- বিছানার চাদর, টাওয়েল, ছোট গালিচা ও কার্পেট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। 
* ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিভিন্ন কাজে যেমন- টায়ার কর্ড, ব্যাগ, কনভেয়র এবং মেডিক্যাল বিভিন্ন কাপড় যেমন ব্যান্ডেজ ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।

Content added || updated By

আরও দেখুন...

Promotion